করোনায় আবারো আক্রান্ত গোটা বিশ্ব। বলা হচ্ছে করোনা বার বার রূপ বদলাচ্ছে। পরিবর্তিত রূপের করোনা, টিকার ২ ডোজ প্রাপ্ত লোকদেরও আক্রান্ত করতে পারে। একই কারণে আগে যারা করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন এবং শরীরে এন্টিবডি আছে তারাও আক্রান্ত হতে পারেন বলে বলা হচ্ছে। এদিকে যারা প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন তারা কবে করোনার দ্বিতীয় ডোজ পাবেন তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা সংকট, অক্সিজেন সংকট, আই.সি.ইউ. বেড সংকট, দক্ষ জনবল সংকট সবই বাড়বে। শত চেষ্টা করেও এই সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না। এই রোগের আবার কোন নির্দিষ্ট কোন ওষুধ নেই। তাই করোনা হলে মূলত ভাগ্যের উপর নির্ভর করা ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই।

করোনা যতই তার রূপ বদলাক না কেন বাঁচতে হলে করোনা ভাইরাসকে নাক-চোখ-মুখ দিয়ে মানব দেহে ঢুকতেই হবে। ভাইরাসটি কোন কোন পাখি বা প্রাণীর ভিতর ঢুকতে পারলেও সে বেঁচে থাকতে পারে। তবে এটা গণহারে মানব দেহে ছড়ায় কি না, সেটা এখনো নিশ্চিত নয়। এই ভাইরাসটি নিজে উড়তে পারেনা বা চলতে পারে না। তাই বাতাসে উড়ে এসে মানব দেহে ঢোকার কোন সম্ভাবনা নেই। করোনা আক্রান্ত রোগীর প্রশ্বাসের সাথে, কথা বলার সময় মুখের লালার সাথে সে বেরিয়ে আসে। বেরিয়ে আসার পর যে ভাইরাসগুলো লালা বা শ্লেস্মার বড় বড় কনার সাথে থাকে সেগুলো কয়েক ফুট দূরে গিয়ে নীচে পড়ে যায়। আবার হালকা কনার সাথে থাকা ভাইরাস বাতাসের সাথে ভেসে ৬ ফুটের মতো দূরে গিয়ে নীচে পড়ে। হাঁচি দিলে তা ১৮ ফুটের বেশী দূরে পড়ে। করোনা রোগীর শতকরা ৮০ ভাগই জানে না যে সে করোনায় আক্রান্ত।

ফলে এটা জানা সম্ভব নয়, কার প্রশ্বাস বা মুখ বা হাঁচি থেকে করোনা ভাইরাস বেরিয়ে আসছে। বাতাসের এই করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায় হলো আমাদের নাক-মুখ-চোখ দিয়ে ঢুকতে না দেয়া। আমরা যদি ভাল মাস্ক পড়ি তা হলে করোনা নাক দিয়ে ঢুকার সম্ভাবনা কম। এখন বলা হচ্ছে দুইটি করে মাস্ক পড়তে। তা হলে নাক দিয়ে ঢুকার সম্ভবাবনা আরো কম থাকবে। নাকতো গেল, মুখের কি হবে? মুখের ঠোটগুলো যদি উম্মুক্ত থাকে তবে ভাইরাস ঠোটে পড়বে। আমরা যে কোন সময় তা মুখে ঢুকিয়ে ফেলতে পারি। ভাইরাসটি পেটে চলে যেতে পারে বা মুখের নীচের অংশ ফেরিংক্স ও নাকের সংযোগস্থল দিয়ে ফুসফুসে ঢুকে যাবে। তাই নাকের সাখে মুখের ঠোটজোড়া যাতে ঢাকা থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এমনিতেই অবশ্য মাস্ক পড়লে ঠোট ঢেকে যায়। এরপর থাকে চোখ। চোখ নিয়ে কি করবেন? চশমা পড়তে পারেন। তবে তা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিবে না। আবার মাস্কের ফাক দিয়েও ভাইরাসটি ঢুকে যেতে পারে।

তাই মাস্ক পড়ার সাথে সাথে আরেকটি নিয়ম মানতেই হবে। সেটা হলো যে কোন লোক থেকে অন্তত ৩ ফুট দুরে থাকা। কারণ আপনি জানেন না কে আক্রান্ত আর কে আক্রান্ত নন। তাহলে বড়বড় কনার সাথে থাকা ভাইরাসগুলো সরাসরি আপনার নাকে ঢুকতে পারবে না। মনে রাখবেন, বড় কনায় বেশি ভাইরাস থাকে। যদি ৬ ফুট দুরত্ব বজায় রাখেন তবে ভাইরাস ঢোকার সম্ভাবনা একেবারেই কম থাকবে। চোখ দিয়েও ভাইরাস ঢুকার সুযোগ কম থাকবে।

খোলা জায়গায় ভাইরাস বাতাসের সাথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেক দূরে চলে যেতে পারে। স্বভাবতই এতে ভাইরাসের ঘনত্ব কমে যায়। আপনি আক্রান্ত হবেন কম। তাই বাইরে যখন বেরোবেন মাস্ক পড়ে অপরজনের কাছ থেকে যদি ৬ ফুট দুরত্ব বজায় রাখেন আপনি অনেকটা নিরাপদ। দুজন যদি মাস্ক পড়ে থাকেন তবে ৩ ফুট হলেও চলতে পারে। তবে ৬ ফুট দুরত্ব রেখে চলাই উত্তম। এটাকে বলে শারীরিক দূরত্ব। আরেকটি হলো সামাজিক দূরত্ব। মানে সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলা। সামজিক অনুষ্ঠান মানে কারো বিয়েতে, জন্মদিনে বা যে কোন অনুষ্ঠানে না যাওয়া।

এই যে দুটো কাজ তিন থেকে ছয় ফুট শারীরিক দুরত্ব মেনে চলা, সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলা এবং মাস্ক পড়া এগুলোর সবই হলো হাজার বছরের বিশ্ব ঐতিহ্যের লংঘন। মাস্ক পড়েতো স্বাস্থ্য কর্মীরা। জনগণের জন্য মাস্ক পড়া ব্রিবতকরতো বটেই। কিন্তু না পরে এখন কোন উপায় নেই। কাছাকছি গা ঘেষে থাকা, কথা বলা, আড্ডা মারা এটাতো হাজার হাজার বছরের বিশ্ব মানুষের অভ্যাস। এটার পরিবর্তন ঘটানো কঠিনই বটে। সামজিক অনুষ্ঠানে যাওয়াতো একটা বিশ্ব ঐতিহ্য। আমাদের এখানে আরো প্রবল। হ্যা, সামজিক অনুষ্ঠনগুলো ৮/১০ জনের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখতে পারলে নিয়ম মানা যাবে। বেঁচে থাকতে হলে আপাতত এইসব নিয়ম না মেনে কোন উপায় নেই।

মনে রাখতে হবে, বদ্ধ ঘরে করোনা ছড়ায় বেশি। একটি বদ্ধ ঘরে দীর্ঘক্ষণ সামাজিক অনুষ্ঠান করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এইসব কষ্টতো বেশিদিন করতে হবে না। সফল টিকা নিশ্চয়ই আবিষ্কার হবে ২ থেকে ৫ বছরের ভিতর। আবার ভাইরাসটি পরিবর্তিত হতে হতে নিজেই একসময়ে মরে যাবে। ভয়ঙ্কর সার্স ভাইরাসতো এখন আর নেই। জীবনতো তার চাইতে অনেক দীর্ঘ। এই স্বল্প সময়ের কষ্ট আমাদের জীবনের স্বাভাবিক পূর্ণতা দিবে ভেবেই এটা মানতে হবে।

পরেরর নিয়মটি মানা সহজ তবে মনযোগী হতে হবে। সেটা হলো ঘন ঘন ২০ সেকেন্ডর অধিক সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। কারণ হলো যে ভাইরাসগুলো নীচে পড়ে তা পড়তে পারে আপনার কাপড়ে, আপনার সামনের টেবিলে, আসবাবপত্রে। আপনি সেখানে হাত দিয়ে নাক-মুখ-চোখ চুলকালে ভাইরাস আপনার নাক-মুখ-চোখে লাগবে আপনি আক্রান্ত হবেন। তাই কোন কিছু ধরার পর বা একসাথে অনেক জিনিস ধরার পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলবেন। একটি কথা মাথায় রাখবেন নাক-মুখ-চোখে হাত দেয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। সেনিটাইজারও ব্যবহার করতে পারেন। তবে নকলের যুগে এর উপর বেশি ভরসা রাখা ঠিক নয়।

মোদ্দা কথা হলো করোনাবিধিগুলো মেনে চলাই বেঁচে থাকার প্রধান উপায়। এইসব বিধি প্রতিদিনই শতবার করে টিভি চ্যানেলগুলো বলছে। আমার প্রয়োজন হলো সেগুলো মানা। এগুলো মানলেই করোনার সংক্রমণ বন্ধ হয়ে যাবে? না, একেবারে বন্ধ হবে না। অসতর্ক মুহুতে যে কেউ আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু আমরা সবাই যদি বিধি মেনে চলি তবে সংক্রমণ অনেক কমে যাবে। হাসপাতালে রোগী কম হবে। আক্রান্তরা চিকিৎসা পাবে। সবদিক বিবচেনায় নিয়ে সবাই করোনা বিধিগুলো মেনে চলবেন এটা প্রত্যাশা রইলো। আরো কিছু নিয়ম আছে। সেগুলো না হয় টিভি চ্যানেলগুলো দেখে জেনে নিবেন।