প্রাবন্ধিক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রায় ২০ এর অধিক বইয়ের লেখক সাখাওয়াত হোসেন মজনু গত ১ মে সকাল ৮টার দিকে মারা গেছেন। ছাত্রজীবনে আগ্রাবাদ স্কুলে পড়া অবস্থায় স্কুল ছাত্র লীগের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি সে সময় স্বাধীনতাপন্থী ছাত্রলীগের একজন বলিষ্ট কর্মী ছিলেন। কিশোর অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম শহরে যুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন করতে লিফলেট বিলি করতেন, মুক্তিযোদ্ধাদের শহরের সংবাদ এনে দিতেন। বি এল এফ, কেসি ৩ এর হয়ে তিনি এইসব কাজ করেছেন।

স্বাধীনতার পর কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় তিনি সাংবাদিকতার সাথে জড়িত হন। ১৯৯০ সাল থেকে ‘সাম্প্রতিক চট্টগ্রাম ও দৈনন্দিন টুকিটাকি’ নামে তিনি দৈনিক আজাদীতে নিয়মিত লিখতেন। এই কলামটি খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। ১৯৮৪ সাল থেকে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের সাথে জড়িত থেকে ‘বাঙালির জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম’ বইটির তথ্য সংগ্রহ ও সম্পাদনার কাজে নিয়োজিত হন। এরপর তিনি বধ্যভূমি ও নির্যাতন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন ও তথ্য সমৃদ্ধ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশ করেন, যার মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো, নির্যাতন’৭১, ‘রণাঙ্গণে সূর্য সৈনিক’, ‘মুক্তিযুদ্ধে আমার কৈশোর’, ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে শহর চট্টগ্রামের বধ্যভূমি ও নির্যাতন কেন্দ্র’। এছাড়া আরো বেশ কিছু বই লিখেছেন।

তিনি মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্টের একজন ট্রাস্টি। মজনু গবেষণার খুব গভীরে প্রবেশ করতেন। নির্যাতিতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে, মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে, ঘটনাস্থলের আশে পাশের মানুষের কাছ থেকে তথ্য নিতেন। তার মৃত্যুতে দেশ একজন মৌলিক গবেষককে হারালো। মজনু সাপ্তাহিক ‘অনুবীক্ষণ’ ও ‘স্বাস্থ্য চিন্তা’ শুরু থেকেই জড়িত ছিলেন।

মজনুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্টের পক্ষে ডা. মাহফুজুর রহমান, ওমর সাফায়াত কাওসার, রাখাল চন্দ্র বণিক, ফাহিমউদ্দিন আহমদ, জাহাঙ্গীর আলম, বেলায়েত হোসেন, তাজুল ইসলাম, নুরুল আলম মন্টু, সিরাজুল ইসলাম রাজু, দেওয়ান মাকসুদ আহমদ, রেজাউল করিম চৌধুরী কুসুম প্রমুখ। এছাড়া শোক প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন জাসদ নেতা আবদুল আহাদ চৌধুরী, সোলায়মান খান, শ ম নজরুল, নুরুল আরশাদ চৌধুরী, গণ অধিকার চর্চা কেন্দ্রের মশিউর রহমান খান, জয়নুদ্দিন জয় প্রমুখ। অনুবীক্ষণ ও স্বাস্থ্যচিন্তার পক্ষ থেকেও গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে।