আমাদের পরিকল্পনামন্ত্রী বেশ শক্তিশালী ভাবেই আমলাতন্ত্রের পক্ষে দাড়িয়েছেন। তার মত হলো আমলাতন্ত্র ছাড়া পৃথিবীর কোন দেশই চলে না। আমলাতন্ত্রে এই আমলে দেশ ভালই আছে। দেশ ভাল চলছে কি না সেটা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে। এটা আলোচনার বিষয়বস্তু নয়। আমলা আর আমলাতন্ত্র এক জিনিস নয়। সরকারের সব কর্মচারি আমলা। তবে আমলা বলতে আমরা বুঝি উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারি। সরকারি কর্মচারি ছাড়া কোন দেশই চলে না।

গণতান্ত্রিক সরকারের নিয়ম হলো দেশের যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিবেন জনপ্রতিনিধিরা। আমলারা তা বাস্তবায়িত করবেন। যেমন একটি এলাকায় কোথায় রাস্তা হবে বা ব্রীজ করতে হবে। এটা কোথায় করতে হবে তা ঠিক করবেন এলাকার জনপ্রতিনিধি। সেখানে তারা স্থানীয় প্রশাসনের ইঞ্জিনিয়ারের সাথে আলোচনা করবেন। সবদিক বিবেচনা করে স্থান নির্ধারণ করবেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দ। এরপর রাস্তা বা ব্রীজটি তৈরী করার দায়িত্ব পড়বে স্থানীয় প্রশাসনের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের উপর। তারাই রাস্তা বা ব্রীজের নকশা তৈরী করবে, এর জন্য বাজেট ঠিক করবে। এরপর সেই নকশা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দেখবেন, অনুমোদন দিবেন। বাজেট নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আলোচনা করবেন। বাজেটে প্রয়োজনীয় সংযোজন বিয়োজন ঘটাবেন। এরপর কাজ শুরু করবেন কর্মকর্তারা মানে ছোট বড় আমলারা। কাজ নকশা মেনে, বরাদ্দকৃত বাজেট অনুযায়ী হচ্ছে কিনা তার তদারকি করবেন জনপ্রতিনিধিরা। নির্দ্দিষ্ট সময়ের আগেই যদি রাস্তা নষ্ট হয় বা ব্রীজটি ভেঙে যায় তবে তার দায়িত্ব নিবেন জনপ্রতিনিধিরা। স্থানীয় আমলাদের জবাবদিহী করতে হবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে। এই কথাগুলো জনাব মান্নান সাহেবের মতো অনেক আমলার পছন্দ নাও হতে পারে। ভাবতে পারেন জনপ্রতিনিধিরা রাস্তা বা ব্রীজের কি বুঝবে? না, তারা সব বুঝবে না। সে জন্যেইতো সরকারি কর্মকর্তা মানে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব আছেন, তার দলবল আছে, কন্ট্রাকটার সাহেব আছেন। খরচাপাতির খবর তারা জানবেন, তারা এর খরচ নির্ধারণ করবেন। কিন্তু খরচে যদি দেখা যায় এক হাজার টাকার রডের দাম ১০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে, ৫০০ টাকার সিমেন্টের দাম ৫ হাজার টাকা ধরা হয়েছে সেটা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানবেন না এমন মনে করার কোন কারণ নেই। অবশ্য এই সমস্যা সমাধানের জন্য এলাকার শ্রম কর্ম পেশার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের স্থানীয় ভাবে সম্পৃক্ত করা যায়। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বে ৯ অনুচ্ছেদে স্থানীয় সরকারে শ্রম কর্ম পেশার নির্বাচিত প্রতিনিধি নেয়ার বিধান ছিল। এটি মানা হলে সরকারি কর্মচারিদের প্রতিনিধিরাও জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি এলাকার কর্তৃত্বে আসতে পারতেন।

গণতান্ত্রিক সরকারে জনপ্রতিনিধি এবং আমলা এইভাবেই একে অপরের সম্পূরক হিসেবে কাজ করে থাকেন। তবে এলাকার যাতীয় উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজে সবার উপরে থাকবেন এলাকার জনপ্রতিনিধিবৃন্দ। সংবিধান অনুয়ায়ী স্থানীয় পর্যায়ের সকল সরকারি কাজ ও উন্নয়নে এটাই হওয়ার কথা। কারণ সংবিধানের নির্দেশনা এটাই। ৫৯ অনুচ্ছেদের ২ ধারায় বলা আছে ,এই সংবিধান ও অন্য কোন আইন-সাপেক্ষে সংসদ আইনের দ্বারা যেরূপ নির্দিষ্ট করিবেন, এই অনুচ্ছেদের (১) দফায় উলি­খিত অনুরূপ প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান যথোপযুক্ত প্রশাসনিক একাংশের মধ্যে সেইরূপ দায়িত্ব পালন করিবেন এবং অনুরূপ আইনে নিম্নলিখিত বিষয়-সংক্রান্ত দায়িত্ব অন্তর্ভুক্ত হইতে পারিবে। (ক) প্রশাসন ও সরকারী কর্মচারীদের কার্য, (খ) জনশৃঙ্খলা রক্ষা, (গ) জনসাধারণের কার্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন-সম্পর্কিত পরিকল্পনা-প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। ৬০ অনুচ্ছেদে বলা আছে, এই সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদের বিধানাবলীকে পূর্ণ কার্যকরতাদানের উদ্দেশ্যে সংসদ আইনের দ্বারা উক্ত অনুচ্ছেদে উলে­খিত স্থানীয় শাসন-সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্থানীয় প্রয়োজনে কর আরোপ করিবার ক্ষমতাসহ বাজেট প্রস্তুতকরণ ও নিজস্ব তহবিল রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষমতা প্রদান করিবেন। সংবিধানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা সরকারি কর্মকর্তাদের উপরেই দেয়া ছিল। বাস্তবে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা এলাকার কর্তৃত্বে অধিষ্টিত আছেন। জনাব মান্নান এই অসাংবিধানিক ব্যাপারটিকেই জোর সমর্থন জানালেন।

দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো ৭২ সংবিধান পাশের পর এবং সংবিধানের ৫৯, ৬০ ধারা সব সরকার কর্তৃক বহাল রাখার পরও এতো বছরেও এই দুইটি অনুচ্ছেদ মেনে আমাদের জাতীয় সংসদগুলো আইন পাশ করেননি। আর ৯ অনুচ্ছেদ বাতিলের জন্য কোন দাবি না উঠা সত্বেও এই অনুচ্ছেদটি সংশোধনীর মাধ্যমে বাদ দেয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয়ভাবে দেশের সর্বোচ্চ নির্বাহী হিসেবে আছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জনপ্রতিনিধি, আবার প্রতিমন্ত্রণালয়ের নির্বাহী প্রধান সেই মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী। তিনিও একজন জনপ্রতিনিধি বা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মনোনীত কেউ। মাননীয় মন্ত্রীর দায়িত্ব হলো জাতীয় সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার মন্ত্রণালয় চালানো। প্রতি মন্ত্রণালয়ে সরকারি কর্মচারি বাহিনীর প্রধান থাকেন একজন সচিব বা সিনিয়র সচিব।সচিব তার অধীনস্থ আমলাদের সহায়তা নিয়ে মাননীয় মন্ত্রীকে তার মন্ত্রণালয় চালাতে সহযোগিতা দেন। তাই মন্ত্রণালয় চালাতে আমলার কোন বিকল্প নেই। মাননীয় মন্ত্রী যদি মন্ত্রণালয় চালাতে দক্ষ হন, কোন বেআইনী সুযোগ সুবিধা না নেন তবে মন্ত্রণালয় চালাতে তার অসুবিধা থাকার কথা নয়। আমলারা তার নির্দেশ মতো চলবেন। আবার প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের জবাব নেয়ার জন্য রয়েছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বলা যায় কেন্দ্রীয় অবয়বটি গণতান্ত্রিক। এটা আমলাতন্ত্র নয়।

দেশের বা মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় সিদ্ধান্ত যখন আমলারা নেন এবং সেটাকে মন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বলে চালিয়ে দেন এবং মন্ত্রীরা অসহায়ের মতো সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেন তখন তাকে আমলাতন্ত্র বলে। মাননীয় মন্ত্রী যখন প্রকাশ্যে আমলাতন্ত্রের জয়গান গান তখনতো এটা স্বীকার করতেই হয় দেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আমলাদের নিয়ন্ত্রণে চলছেন। গণতান্ত্রিক অবয়বটি ঠিক মতো কাজ করছে না। এটা আর যাই হোক গণতন্ত্রের জন্য শুভতো নয়ই বরং চপেটাঘাত। আমলাতন্ত্র দিয়ে দেশের উন্নতি হতে পারে দেশের সাধারণ জনগণের কল্যাণ হয় এমন প্রমাণ নেই।

আমলাতন্ত্রের শুরু হয়েছিল বৃটিশ আমলে। গভর্নর জেনারেল, গভর্নর, দেশের পুলিশ প্রধান, প্রধান বিচারক থেকে শুরু জেলা, থানা পর্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ কর্মকর্তাদের সবাই ছিলেন ইংরেজ। বৃটিশ শাসনের এক পর্যায়ে নির্বাচিত ভারতীয় প্রতিনিধি দিয়ে প্রদেশগুলো চালাতো হতো বটে কিন্তু প্রশাসনের উপর তাদের কর্তৃত্ব কমই ছিল। ইংরেজরা তাদের স্বার্থে জনগণকে শোষণ করে লুন্ঠিত সম্পদ ইংলন্ডে পাঠাতেই রাষ্ট্রকে আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সাজিয়ে নিয়েছিলেন। বৃটিশ আমলে উন্নয়ন হয়েছে তবে তা ইংরেজদের স্বার্থে। পাকিস্তানি শাসকরা একই লক্ষ্যে বৃটিশ ঔপনিবেশিক আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় কাঠামো বহাল রেখেছিলেন। দুর্ভাগ্য আমাদের, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশেও একই কাঠামো বহাল রাখা হয়।

বঙ্গবন্ধু প্রধানত পাকিস্তানের অনুগত আমলা দিয়েই তার শাসন কাজ শুরু করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে জড়িত কিছু আমলা সেই সময়ে প্রশাসনে জড়িত হন। আমলাতান্ত্রিক কাঠামোতে তারাও আমলাতন্ত্রিক মনোভাবের হয়ে যান। বঙ্গবন্ধু আমলাদের উপর যে তুষ্ট ছিলেন এমন নয়। তাইতো তিনি ৭২ সালের ৩০ মার্চ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত একজন জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, আমলা নয় ,মানুষ সৃষ্টি করুন। কতটুকু ক্ষুব্ধ হলে তিনি এ কথা বলতে পারেন তা ভেবে দেখতে হবে। সরকারি কর্মচারিদের শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে তিনি ৭২ সালের ১১ জুন এক নির্দেশ দেন যাতে বলা হয, সরকারি সকল চিঠিপত্র একই শহরের মধ্যে হলে সরকারি কর্মচারিরা নিজেদের মধ্যে আদান প্রদান করবেন, সিডিওর মাধ্যমে নয়, চিঠি পাওয়ার পর সময় ও তারিখ উলে­খ করতে হবে, চিঠি পত্র পাওয়ার পর তা বিবেচনার জন্য সেকশন অফিসাররা ৭২ ঘন্টা, ডে. সেক্রেটারিরা ৪৮ ঘন্টা, আরো উর্ধতন কর্মকর্তারা মাত্র ২৪ ঘন্টা সময় পাবেন, জটিল বিষয়ে কর্মকর্তারা বসে সিদ্ধান্ত নিতে একদিন সময় পাবেন। বঙ্গবন্ধু এই নির্দেশ পালিত হযনি। হলে ফাইল চালাচালির জনদুর্ভোগের নিরসন হতো। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনি অবশেষে আমলাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় জড়িয়ে বাকশাল করেন। আমলারা জড়িত থাকলেও বাকশালে রাজনীতিবিদদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু নিহত হলে আবার আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় যা এখনো চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিক মাত্রায় আমলা নির্ভর বলে অভিযোগ রয়েছে। অতীতের বঙ্গবন্ধুর সময়ের আমলাদের সাথে বর্তমান আমলাদের পার্থক্য রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আমলাদের সিংহভাগ নয় মাস পাকিস্তানের সেবা করেছেন। মনমানসিকতার দিকে থেকে ছিলেন পাকিস্তানি এবং আমলাতান্ত্রিক। বর্তমান আমলাদের সবাই চাকরিতে ঢুকেছেন বাংলাদেশ আমলে। পাকিস্তানি ধ্যান ধারণা তাদের থাকার কথা নয়। কিন্তু চলমান আমলাতান্ত্রিকতার জালে তারা আবদ্ধ হয়ে গেছেন। স্বাধীন দেশের আমলারা জনগণের প্রভু হয়ে বসে আছেন। মাননীয় মন্ত্রীর এটা বুঝার কথা নয়। তিনি চাকরির শুরু করেছেন আমলা হিসেবে পাকিস্তান আমলের একেবারে শেষ দিকে। আজীবন আমলা ছিলেন। পরে স্বল্পকালীন সময় রাজনীতি করেই মন্ত্রী হয়ে গেছেন আমাদের রাজনৈতিক কাঠামোর দূর্বলতার সুযোগে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি সৎ এবং সজ্জন। তার রাজনীতি করা এবং মন্ত্রী হওয়া নিয়ে কাউকে আপত্তি করতে দেখা যায়নি। কিন্তু তিনি যে ভাবে আমলাতন্ত্রের পক্ষে দাড়িয়েছেন, সাফাই গাইছেন তা পিছিয়ে পড়া রাজনীতিকে আরো পিছিয়ে দেবে যা দেশের জন্য কল্যাণ কর হবে না। আমলা ছাড়া দেশ চলে না এটা যেমন ঠিক তেমনিআমলাদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে দেশ বিপদে পড়ে। তার উদাহরন হলো পাকিস্তান। মাননীয় মন্ত্রী নিশ্চয়ই জানেন, পাকিস্তানের সবচাইতে ক্ষমতাধর পদ ছিল প্রথমে গভর্নর জেনারেল এবং পরে প্রেসিডেন্ট। পাকিস্তানের ক্ষমতাধর এই পদে দুইজন মাত্র রাজনীতিবিদ ছিলেন-মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও খাজা নাজিম। এরপর তিন সামরিক ব্যক্তি জেনারেল ইসকান্দার মীর্জা, জেনারেল আইয়ুব খান ও জেনারেল ইয়া খান প্রেসিডেন্ট হন। তারা দেশের উন্নয়ন কম করেননি। কিন্তু সেই উন্নয়ণের সুফল কিন্তু জনগণ পায়নি পেয়েছে পশ্চিমা ধনী গোষ্ঠী। বাঙালি জনগণতো মারাত্মকভাবে বঞ্চিত হয়েছিল। তার ফলাফলতো সবার জানা। স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রথম প্রেসিডেন্ট, দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী ও আবার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতা কেড়ে নেয় সেনা সমর্থিত মুশতাক এবং অবশেষে জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদ। সেই সময়ে দেশের কিছুটা উন্নতি যে হয়নি তা নয়। সবশেষে এলেন আরেক রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনা। তার সময়ে দেশ উন্নতির এক উচ্চ মাত্রায় পৌছেছে এতে কারো সন্দেহ নেই। কিন্তু একই সাথে জনভোগান্তি, দুর্নীতি সম্পদ পাচারও বেড়েছে তাতে কেউ সন্দেহ পোষণ করে না। শেখ হাসিনা সরকার সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের ঘুষ দুর্নীতি কমাতে বেতন বাড়িয়েছেন উলে­খযোগ্য হারে। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি।কারণ হলো বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক হলেও রাষ্ট্রের উপর নীচ সব কাঠামোতেই আমলাদের কর্তৃত্ব বিদ্যমান। আমলাতন্ত্র একটি চক্র যার বাইরে যাওয়া কোন সৎ ও দক্ষ আমলার পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের অনেক সচিব, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এমনকি উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা আছেন যারা সৎ বলে পরিচিতি। অনেক মন্ত্রীর সততা নিয়ে প্রশ্ন উঠেনি। কিন্তু মন্ত্রীর সেই মন্ত্রণালয়, উচ্চপদস্থ সেই কর্মকর্তাদের দফতরে দুর্নীতি হয় না এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারেননি। সৎ মন্ত্রী ,সৎ আমলা নিজে দুর্নীতি করেন না কিন্তু তার দফতরের দুর্নীতি বন্ধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেন না।

এখানে কাউকে দোষারূপ করার সুযোগ নেই। এই চক্র যতদিন থাকবে ততদিন দুর্নীতি অনিয়ম উর্ধমুখী হবে। এটাকে আমলাতন্ত্রের ধর্মও বলা যায়। তাই দুর্নীতিমুক্ত জনগণের জন্য কল্যানমুখী দেশ গড়তে হলে আমলা চক্রকে ভাঙতে হবে। জনাব মান্নানের উচিত দেশের সব শ্রেণির সৎ ও দক্ষ আমলাদের সহায়তা নিয়ে এই চক্রকে অন্তত থামানোর উদ্যোগ নেয়া। এই ক্ষেত্রে সংবিধানের ৫৯, ৬০ ধারা মেনে স্থানীয় সরকার আইন পাশ করার জন্য, স্থানীয় সরকারে শ্রম কর্ম পেশার নির্বাচিত প্রতিনিধি নেয়ার জন্য মাননীয় সংসদ সদস্যদের সাথে আলোচনা করতে পারেন। আর এখনই যা পারেন তা হলো বঙ্গবন্ধুর ১১/৬ /৭২ এর নির্দেশটি প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করতে পারেন।

এটা স্বতসিদ্ধ ব্যাপার যে পরাধীন দেশের জন্য সৃষ্ট আমলাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা দিয়ে একটি স্বাধীন দেশ চলতে পারে না। জোর করে চালাতে গেলে সংকট এবং জনদুর্ভোগ বাড়ে। অভাবনীয় উন্নতি সত্বেও জনদুর্ভোগও আকাশচুম্বী। এই উন্নয়নের সুফল যাতে সাধারণ জনগণের দুয়ারে পৌছে এর জন্য আমলাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে স্বাধীন দেশের উপযোগী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা জরুরি। মাননীয় মন্ত্রী আমলাতান্ত্রিক ঔপনিবেশিক কাঠামোর পক্ষে সাফাই গাওয়ার পরিবর্তে স্বাধীন দেশের উপযোগি রাষ্ট্রীয় কাঠামো গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবেন এটাই সবার প্রত্যাশা। এই কাঠামোতেও আমলা থাকবে। কাঠামোটি এমন হতে হবে যাতে দক্ষ এবং সৎ আমলারা জনপ্রতিনিধিদের কর্তৃত্বে থেকেই জনকল্যানের সুযোগ পায়। দেশে গণতান্ত্রিক শাসন চলছে বলে যদি দাবি করা হয় তবে শাসনতো জনপ্রতিনিধিরাই করবে। সরকারতো দাবি করছে সরকার গণতান্ত্রিক। তবে মাননীয় মন্ত্রী কি করে দাবি করেন আমলাতান্ত্রিক শাসনে দেশ ভালই চলছে? তবে কি মাননীয় মন্ত্রী স্বীকার করে নিয়েছেন বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক নয় আমলাতান্ত্রিক? মাননীয় মন্ত্রীর এই বক্তব্য অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।